আশ্বিনের শারদপ্রাতে
বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জরী
ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা
প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত
জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা।
Durga Puja Rachana in Bengali: আশ্বিন মানেই প্রকৃতিতে পুজো পুজো গন্ধ। আশ্বিনের আকাশে বাতাসে মহালয়ার নিবিড় সুরই জানান দেয় মহামায়ার আগমনবার্তা সম্পর্কে। বাঙালি অথচ দূর্গা পুজো নিয়ে কোনো স্মৃতি বা আবেগ কাজ করে না এমনটা হয়তো আমরা কোথাও পাবো না। প্রবাসী বাঙালি যারা রয়েছেন তারা আর কোনো বাঙালি কালচার মানুন অথবা নাই মানুন দূর্গা পুজোতে তাদের বাঙালিয়ানার কোনো রকম ঘাটতি থাকে না। তাই একদিক থেকে দেখতে গেলে দূর্গা পুজোই হয়ে ওঠে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। আজকে আমরা জেনে নেবো আমার প্রিয় উৎসব durga puja rachana in bengali.
আরও পড়ুন:
আরও নতুন পোস্ট সবার আগে পেতে Telegram জয়েন করুন !
Contents
Durga Puja Rachana in Bengali
সূচনা:
আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি
অসীম ছন্দে বেজে ওঠে
রূপলোক ও রসলোক
আনে নব ভাবমাধুরীর সঞ্জীবন।
তাই আনন্দিতা শ্যামলীমাতৃকার
চিন্ময়ীকে মৃন্ময়ীতে আবাহন।
বাঙালির প্রধান উৎসব যে দুর্গাপূজা তা আর আলাদা করে বলার ব্যতিক্রম রাখে না। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী বাঙালির দূর্গা পূজা হলো দেবীর অকালবোধন। এক বছরের পুজো কাটতে না কাটতেই দিন গোনা শুরু হয় পরের বছরের পুজোর, পুজো ঘিরে বাঙালির এই আবেগ বিশ্ববাসীর কাছে অভাবনীয়।
পুজোর শপিং এ Special অফার Amazon এ !
পুজোর ইতিহাস:
দূর্গাপূজার ইতিহাস নিয়ে অনেক মতামত প্রচলিত আছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি হল- শ্রীরামচন্দ্র রাবনের সাথে যুদ্ধের আগে ১০৮ টি নীলপদ্ম নিবেদন করে দেবী দুর্গার অকাল বোধন আয়োজন করেছিলেন। অকালবোধন অর্থাৎ অসময়ে দেবীর বোধন, দেবী মহামায়ার পুজো সাধারণত বসন্তকালেই হতো। কিন্তু শ্রীরাম যুদ্ধ জয়ের আগে মায়ের আশীর্বাদ পাওয়ার জন্যে শরৎকালে দেবীর আরাধনা করেন যাকে অকাল বোধন বলা হয়। কথিত আছে টানা নয়দিন দেবীর আরাধনার পর দশম দিনে তিনি রাবনকে যুদ্ধে পরাস্ত করেন এবং বোধ করেন। সেই দিনটিকেই আমরা বিজয়া দশমী হিসেবে পালন করে থাকি।
অনেকে আবার মনে করেন মহিষাসুর বধের জন্যেই মা দুর্গার মর্ত্যে আগমন।পুরাকালে মহিষাসুর নামক এক অসুর ব্রহ্মার বরে অমরত্ব লাভ করে দেবতা এবং মর্ত্যবাসীর ওপর নৃসিংশ অত্যাচার শুরু করলে তার বধের উদ্দেশ্যে দেবতা এবং ত্রিদেব সকলে মিলে জগন্ময়ী মাতার আহ্বান করেন। মহাময়ী জগন্মাতা সেই আহ্বানে আবির্ভূতা হয়ে নয়দিন মহিষাসুর এর সাথে যুদ্ধ করার পর দশমদিনে মহিষাসুরকে শূলবিদ্ধ করেন। সেই থেকেই এই দশদিন দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয়।
আরও নতুন পোস্ট সবার আগে পেতে Telegram জয়েন করুন !
উৎসবের পটভূমি:
দুর্গাপূজা বছরে দুবার হয়। বসন্তকালে যে দূর্গা পুজো হয় তাকে বলে বাসন্তী পুজো, আর শরৎকালে হয় শারদীয় দুর্গাপুজো। যার মধ্যে বাঙালির প্রধান এবং কাছের উৎসবটি হলো শারদীয় দুর্গোৎসব। প্রত্যেক বছর আশ্বিনের শরৎকাল এলেই ধরিত্রী নতুন করে নতুন সাজে নিজেকে সাজিয়ে নিয়ে প্রস্তুত থাকে মহামায়ার আগমন করার উদ্দেশ্য। সোনালি রোদ্দুর ঘেরা নীলাকাশে সাদা মেঘের আল্পনা। পেঁজা তুলোর মতো মেঘবালিকারা শিউলি ফুলের মনমাতানো গন্ধ মেখে লুকোচুরি খেলে। সাদা কাশফুল মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে জানান দেয় সময় হয়েছে নব ভাবমাধুরীর সঞ্জীবনের। প্রত্যেক বছর মায়ের আগমনের বার্তাকে এভাবেই প্রকৃতি এগিয়ে নিয়ে চলেছে কোনো এক ঐতিহ্যবাহী পরম্পরার মতোই
মহালয়া:
মহালয়ার ভোর দুর্গাপুজোর সুরলহরী বেঁধে ফেলে। সেইদিন তর্পনের মাধ্যমে পিতৃপক্ষের অবসান হয়, হয় মাতৃপক্ষের সূচনা। মহালয়ার এই পুণ্য লগ্নে মহামায়ার মৃন্ময়ীকে চক্ষুদান করেন কুমোরটুলির শিল্পীরা। কথায় বলে এইদিন দেবী তার ছেলেমেয়ে কে নিয়ে কৈলাশ থেকে মর্ত্যে নেমে আসেন এবং বেলতলায় আশ্রয় নেন। মহালয়ার পরদিন হয় প্রথমা, সেইদিন থেকেই শুরু হয় মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠা। কোনো কোনো মণ্ডপে আবার ষষ্ঠীর দিন দেবীর বোধন হয়ে থাকে। দশমী অবধি চলে মায়ের আরাধনা। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশে দুর্গোৎসব উপলক্ষে সরকারি ছুটি দেওয়া হয়ে থাকে।
সার্বজনীন পুজো:
কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের মূল আকর্ষণ হলো এর সার্বজনীন দুর্গোৎসবের ব্যাপক প্রবণতা। সার্বজনীন দুর্গোৎসবের মূল বৈশিষ্ট্য হলো এগুলি মূলত সাধারণ মানুষ তথা বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংস্থার স্বেচ্ছামূলক অনুদান দ্বারা আয়োজিত হয়। তবে বনেদি বাড়ির পুজোর ও চল রয়েছে, সেই পুজোর মূল আকর্ষণ হলো শাস্ত্রাচার পালন।
প্রতিমা বর্ণনা:
বাঙালির মান্যতা দেবী দূর্গা বাপেরবাড়ি অর্থাৎ মর্ত্যে আসেন সপরিবারে। সাথে আসেন তার দুই ছেলে গনেশ, কার্তিক এবং দুই মেয়ে লক্ষী ও সরস্বতী। দেবীর পায়ের কাছে থাকে শূলবিদ্ধ অসুর, দেবীর বাহন সিংহ। দেবীর ডানদিকে লক্ষী গনেশ তাদের বাহন প্যাঁচা, ইঁদুর। বামদিকে কার্তিক ও তার বাহন ময়ূর , সরস্বতী ও তার বাহন হাঁস।
ষষ্ঠীর দিন হয় দেবী দুর্গার বোধন, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী তিনদিন মহা সাড়ম্বরে চলে পুজো। সপ্তমীতে নবপত্রিকা স্নান আয়োজন করা হয়। অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিস্থলে আয়োজিত হয় সন্ধিপুজো।সবশেষে আসে দশমীর দিনের পুজোর লগ্ন। যাকে আমরা বলি বিজয়া দশমী।
এখনকার দুর্গাপূজা মণ্ডপ গুলির মূল আকর্ষণ হলো থিমপুজো। থিম অনুযায়ী বিশাল প্যান্ডেল, আলোর বন্যা, আকর্ষণীয় আলোকসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ধুনুচি নাচ, ঢাকের বোলে বাঙালি আনন্দে মেতে ওঠে।
উপসংহার:
ধনী দরিদ্র জাতি ধর্ম ভেদাভেদ ভুলে পরমানন্দে প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধনের মিলনক্ষেত্রই হলো দুর্গাপুজো। দশমীতে মাকে বিদায় দিতে মন না চাইলেও বরণ, মিষ্টিমুখ, সিঁদুর খেলা, ধুনুচি নাচ, ঘন্টা কাঁসর ঢাকের কলরবে মনের বিষন্নতা চেপে রেখে বিসর্জন দিতে হয় মা কে। কিন্তু কথায় বলে না মায়ের ও কি বিসর্জন হয়!!! মা রয়ে যায় মনেই সাথে রয়ে যায় একবুক অপেক্ষা পরের বছর নতুন রূপে নতুন ভাবে এই খুশির দিনগুলো ফিরে পাওয়ার।
ঠাকুর থাকবে সারাক্ষন, মায়ের হয়না বিসর্জন
আসছে বছর আবার হবে।
যুগযুগ ধরে চলুক এই আবহমান প্রতীক্ষা এবং প্রতীক্ষার অবসানের রেষ। ভালো থাকুক মানুষ, ভালো থাকুক পৃথিবী।
Durga Puja Rachana in Bengali FAQs
দেবী দুর্গা কে?
হিন্দু মতে, দেবী দূর্গা হলেন শক্তির প্রতীক। তিনি দশভুজা, দুর্গতি নাশ করার জন্য তাঁর মর্তে আগমন। বাঙালির প্রধান ঠাকুর দেবী দূর্গা এই মান্যতা রয়েছে।
মহালয়া ২০২৩ কবে?
ইংরেজির ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৩ এ এবারের মহালয়া।
আরও নতুন পোস্ট সবার আগে পেতে Telegram জয়েন করুন !